আমরা আজকের পৃথিবীতে ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং স্যাটেলাইট সংযোগ ছাড়া জীবন কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু অবাক করার মতো সত্য হলো, পৃথিবীতে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে এই সব প্রযুক্তি একেবারেই কাজ করে না। এই জায়গাগুলোকে বলা হয় Dead Zone বা No Network Zone। এখানে প্রাকৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক কারণে নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারে না।
১. গভীর সমুদ্র (Deep Ocean)
গভীর সমুদ্র এমন একটি এলাকা যেখানে মানুষের প্রবেশ সীমিত এবং প্রযুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় না। এখানে আলো প্রায় নেই, পানির চাপ অত্যন্ত বেশি এবং তাপমাত্রা খুব কম। এই কারণে সমুদ্রের গভীরতায় মোবাইল বা স্যাটেলাইট সিগন্যাল পৌঁছায় না। অনেক সময় ডুবোযান বা সাবমেরিন-এ গবেষণা করতে হলেও যোগাযোগ সীমিত। এছাড়া, সমুদ্রের ঢেউ ও পানি ঘনত্বের কারণে ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করাও চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রের বিভিন্ন অংশে আলাদা মৌসুমে বা জলস্তরের পরিবর্তন অনুযায়ী ছবি তোলা যায়।
কেন নেটওয়ার্ক যায় না:
- পানির ঘনত্ব ও গভীরতা সিগন্যালকে বাধা দেয়।
- কোনো মোবাইল টাওয়ার নেই।
- যোগাযোগের জন্য বিশেষ সাবমেরিন কেবল বা এক্সপেরিমেন্টাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
২. আমাজন রেইনফরেস্ট (Amazon Rainforest)
দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল বনভূমি, যেখানে প্রকৃতির আধিপত্য প্রযুক্তিকে প্রায় অকার্যকর করে দেয়। প্রচুর নদী, পাহাড়ি এলাকা এবং অসংখ্য গাছপালা মোবাইল এবং স্যাটেলাইট সিগন্যালকে প্রায় পুরোপুরি ব্লক করে। অনেক উপজাতি এখনও বাইরের বিশ্বের সাথে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। বনাঞ্চলের ঘনত্বের কারণে ছবি তোলা ও পর্যবেক্ষণ খুব সীমিত হয়। বর্ষার সময় জলের স্তর বেড়ে যায়, আর শুকনো মৌসুমে কিছু অংশে ট্র্যাকিং বা ছবি তোলা সহজ হয়।
কেন নেটওয়ার্ক যায় না:
- ঘন গাছপালা ও লতা-ঝোপ সিগন্যালকে ব্লক করে।
- নদী ও পাহাড় সিগন্যাল দুর্বল করে।
- মোবাইল টাওয়ার না থাকার কারণে নেটওয়ার্ক প্রায় নেই।
৩. আন্টার্কটিকা ও আর্কটিক অঞ্চল
বরফাচ্ছন্ন এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রযুক্তি ব্যবহারকে সীমিত করে। বরফ ও তুষারাচ্ছন্ন এলাকা, তীব্র ঠান্ডা এবং প্রায় সম্পূর্ণ আলোহীন রাত বা দিন এখানে প্রযুক্তি ব্যবহারকে সীমিত করে। ছবি তোলার সময় বিশেষ যন্ত্রপাতি এবং সময় নির্বাচন করতে হয়। প্রায়শই স্যাটেলাইট কভারেজ এখানে সীমিত এবং পরিবেশগত কারণে সরাসরি যোগাযোগ ব্যর্থ হয়।
কেন নেটওয়ার্ক যায় না:
- অধিকাংশ স্যাটেলাইট নিরক্ষরেখার কাছে কাজ করে।
- তীব্র তাপমাত্রা এবং বরফ প্রযুক্তিকে সীমিত করে।
- সাধারণ মানুষের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
৪. ন্যাশনাল রেডিও কোয়াইট জোন (USA)
এটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক Dead Zone যেখানে সমস্ত ইলেকট্রনিক সিগন্যাল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশাল রেডিও টেলিস্কোপ মহাকাশ থেকে আসা ক্ষীণ রেডিও সিগন্যাল ধরতে ব্যবহার করা হয়। এখানে সাধারণ মানুষের ফোন, ওয়াই-ফাই, বা রেডিও ব্যবহারও সীমিত। ছবি তোলার সময় বিশেষ অনুমতি দরকার এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এলাকা থেকে নেওয়া যায়।
কেন নেটওয়ার্ক বন্ধ:
- গবেষণার জন্য সব ধরনের সিগন্যাল বন্ধ রাখা হয়েছে।
- অন্য সব ইলেকট্রনিক সিগন্যাল মহাকাশ গবেষণায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
৫. গভীর গিরিখাত ও পাহাড়ি এলাকা
বিশাল পাহাড়ি এলাকা প্রাকৃতিকভাবে নেটওয়ার্ক এবং স্যাটেলাইট সিগন্যালকে ব্লক করে। হিমালয়, অ্যান্ডিজ বা রকিজ পর্বতমালার গভীর গিরিখাত প্রায়শই মোবাইল নেটওয়ার্কহীন। ছবি তোলার সময় দিনের আলো, নিরাপদ অবস্থান এবং মৌসুম বিবেচনা করা জরুরি। বিভিন্ন মৌসুমে, যেমন বরফ গলে যাওয়ার সময়, কিছু এলাকা পর্যবেক্ষণযোগ্য হয়।
কেন নেটওয়ার্ক যায় না:
- পাহাড় সিগন্যালকে ব্লক করে।
- তীব্র প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রযুক্তিকে সীমিত করে।
- স্যাটেলাইটও সরাসরি সংযোগ দিতে ব্যর্থ হয়।
উপসংহার
পৃথিবীতে এমন রহস্যময় স্থান রয়েছে যেখানে নেটওয়ার্ক বা স্যাটেলাইট কাজ করে না। এই Dead Zoneগুলো গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, মানুষের কৌতূহল জাগায়, এবং প্রমাণ করে যে পৃথিবীর অনেক অংশ এখনও প্রযুক্তির আওতার বাইরে।
0 Comments